নোয়াখালীর ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা ১৮৩০ সালে
নোয়াখালীর জনগণের জিহাদ আন্দোলনে
সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ১৯২০ সালের খিলাফত
আন্দোলন। বৃটিশ ভারতের শেষ দিকে
নোয়াখালীর রামগঞ্জে এক ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গা
সংঘটিত হয়। সে দাঙ্গা বা রায়টের পর ১৯৪৬ সালে
মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালীতে আগমণ করেন।
এখানে তিনি জাতিগত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রামে
গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। বর্তমান
সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ নামক স্থানে গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম রয়েছে, যা "গান্ধী আশ্রম" নামে পরিচিত। ১৭৯০ সালের পর হতে নোয়াখালী জেলা বহুবার ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, টর্নেডো, সাইক্লোন ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হয়। ১৯৭০সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে নোয়াখালী উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিলো। তখন সমগ্র উপকূলে
প্রায় ১০ লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৭১-এর
স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে বহু
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নোয়াখালীর মাটি রঞ্জিত হয়ে
আছে। সে সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরিহ
নিরস্ত্র মানুষকে বিভিন্ন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে অকথ্য
নির্যাতনের পর হত্যা করে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে
ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ১৯৭১ এর ১৫ই জুনে সোনাপুর আহমদীয়া স্কুল সংলগ্ন শ্রীপুরে নিরিহ
গ্রামবাসীর উপর অতর্কিত এসে হামলা করে
মেশিনগান চালিয়ে প্রায় শতাধিক নারী পুরুষকে হত্যা করে। এ সময় তারা শুধু মানুষ হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, সমগ্র গ্রামটিও তারা জ্বলিয়ে দিয়েছিলো। ১৯৭১সালের ১৯ আগস্ট পাকবাহিনী বেগমগঞ্জ থানার
গোপালপুরে গণহত্যা চালায়। নিহত হন প্রায় ৫০ জন
নিরস্ত্র মানুষ। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর বীর
মুক্তিযোদ্ধারা আসীম সাহসিকতায় যুদ্ধ করে
নোয়াখালী জেলা শত্রু মুক্ত করে।ভৌগলিক সীমানা
চট্টগ্রাম প্রশাসনিক বিভাগের অধীন নোয়াখালী
জেলার মোট আয়তন ৩৬০১ বর্গ কিলোমিটার।
নোয়াখালী জেলার উত্তরে কুমিল্লা, দক্ষিণে
বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা
এবং পশ্চিমে লক্ষীপুর ও ভোলা জেলা অবস্থিত।
বছরব্যাপী সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ৩৪.৩ ডিগ্রী
সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় ১৪.৪ ডিগ্রী
সেলসিয়াস। বছরে গড় বৃষ্টিপাত ৩৩০২ মিমি। এই
জেলার প্রধান নদী বামনি এবং মেঘনা।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ নোয়াখালী জেলায় ৯ টি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হলো: নোয়াখালী সদর, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ, হাতিয়া, সেনবাগ, কবির হাট, সুবর্ণ চর ও সোনাইমুড়ি নোয়াখালীর শহর নোয়াখালী সদর মাইজদি ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আদম শুমারীর সর্বশেষ তথ্য আনুযায়ী শহরের মোট জনসংখ্যা ৭৪,৫৮৫; এর মধ্যে ৫১.৫০% পুরুষ এবং ৪৮.৫০% মহিলা; জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি
বর্গকিলোমিটারে ৫৯১৫। শহুরে লোকদের
মধ্যে শিক্ষিতের হার প্রায় ৬০.৭০%। নোয়াখালী
সদরের আদি নাম সুধারাম। ১৯৪৮ সালে যখন উপজেলা সদর দফতর মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, তখন তা ৮ কিলোমিটার উত্তরে সরিয়ে বর্তমান মাইজদিতে স্থানান্তর করে হয়। তখন থেকে সম্পুর্ন নতুন ভাবে গড়ে উঠে নোয়াখালী শহর যা 'মাইজদী
শহর' নামেও পরিচিত। চৌমুহনী নোয়াখালীর
আরেকটি ব্যস্ত শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্র, যা একসময়ে
মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল। সরিষার তেলের মিলের জন্যও সমগ্র দেশে এ বানিজ্য
কেন্দ্রটির সুখ্যাতি ছিলো। কোম্পানীগঞ্জ
উপজেলার বসুরহাট শহরটি দ্রুত বেড়ে উঠছে এবং
এটি এখন একটি ব্যস্ত শহরের রুপ নিচ্ছে । এই
শহরের অধিবাসীদের একটি বড় অংশ কাজের জন্য
আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। এ অঞ্চলের
যুগদিয়াতে এক সময় একটি ব্যাস্ত নৌবন্দর ছিলো যা
বৃটিশ ভারতে লবণের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো। এখান
থেকেই জাহজ বোঝাই হয়ে পাট এবং লবণ
ইংল্যান্ডে রফতানী হতো। জনশ্রুতি আছে
এখানে এক সময় যুদ্ধ জাহাজ তৈরী হতো এবং তা সারা বিশ্বে রফতানী হতো। অর্থনীতি
বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, নোয়াখালী
জেলার মোট আয় ৩৭৮ কোটি টাকা (১৯৯৯-২০০০)।
জেলার মোট আয়ের ৪৮% আসে চাকরি বা
সেবামূলক খাত থেকে। অপরদিকে আয়ের মাত্র
১৭% আসে শিল্পখাত থেকে। নোয়াখালী জেলার
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশ হারে হচ্ছে।
নোয়াখালী জেলার মানুষের মাথা পিছু আয় ১৩,৯৩৮ টাকা (১৯৯৯-২০০০)। এ জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। তাদের পাঠানো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা জাতীয় আয়কেও সমৃদ্ধ করছে।
চিত্তাকর্ষক স্থান নোয়াখালী জেলার দক্ষিণে অবস্থিত নিঝুম দ্বীপ দর্শনীয় স্থান হিসাবে দিন দিন খ্যাতি লাভ করছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু উপযোগী শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, দৃষ্টি নন্দন বজরা শাহী মসজিদ, সোনাপুরে লুর্দের রাণীর গীর্জা,
উপমহাদেশ খ্যাত সোনাইমুড়ির জয়াগে অবস্থিত গান্ধি আশ্রম, নোয়াখালীর উপকূলে নতুন জেগে উঠা
চরে বন বিভাগের সৃজনকৃত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল,
মাইজদী শহরে অবস্থিত নোয়াখালী জেলা
জামে মসজিদ , নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ
মিনার, মাইজদী বড় দীঘি, কমলা রাণীর দীঘি,
হরিণারায়ণ পুর জমিদার বাড়ি প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান
হিসাবে উল্লেখযোগ্য। উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শিক্ষাদীক্ষায় নোয়াখালীর সুখ্যাতি বহু দিনের। সুদুর
অতীতকাল থেকেই নোয়াখালী আঞ্চলের
মানুষ জ্ঞান লাভের উদ্যেশে দেশ বিদেশে পাড়ি
জমিয়েছিলো। তখন থেকেই এ আঞ্চলে অনেক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। কর্তমানেও অনেক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করে
চলছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য -
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় -
সোনাপুর নোয়াখালী, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ, চৌমুহনী এস এ কলেজ, নোয়াখালী
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় -মাইজদি, সোনাপুর ডিগ্রিকলেজ - সোনাপুর, অরুণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় - মাইজদি বাজার, হরিণারায়ন পুর উচ্চ বিদ্যালয় - হরিণারায়নপুর,
নোয়াখালী সরকারি কলেজ, বিদ্যানিকেতন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় - মাইজদি বাজার, জেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নোয়াখালী জিলা স্কুল ,ব্রাদার আন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয় - সোনাপুর, পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় - মাইজদী,এম এ রশিদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় - মাইজদী, আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাপুর, নোয়াখালী আইন মহাবিদ্যালয় - মাইজদী, নোয়াখালী পাবলিক কলেজ -
মাইজদী, চৌমুহনী মদন মোহন উচ্চ বিদ্যালয় -
চৌমুহনী, বেগমগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় -
বেগমগন্জ, গণিপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় - গণিপুর,
চৌমুহনী, চৌমুহনী সরকারি সালেহ আহমেদ কলেজ
- চৌমুহনী, চৌমুহনী টেকনিক্যাল স্কুল, নোয়াখালী
কৃষি ইন্সিটিউট - বেগমগঞ্জ, টেক্টাইল ইন্সটিটিউট,
নোয়াখালী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রোজক্তি বিশ্ববিদ্ধ্যালয় সোনাপুর
ট্যাকনিক্যাল ইন্সটিট্উট, গাবুয়া। মাইজদী ম্যাডিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেইনিং স্কুল। বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ- কোম্পানীগঞ্জ, বসুরহাট সরকারি এ এইচ সি উচ্চ বিদ্যালয়, বসুরহাট ইসলামিয়া সিনিয়র আলীয়া মাদ্রাসা,
কোম্পানীগঞ্জ মডেল স্কুল (কেজি), বামনী
আছিরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, , কামাল আতাতুর্ক হাই স্কুল, দাগনভূঁয়া, কবির হাট কলেজ, হাতিয়া ডিগ্রি কলেজ, হাতিয়া হাই স্কুল, প্রভৃতি।নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ
উল্লেখযোগ্য সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
জেলার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র -
নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমি শিশু
কিশোরদের শিল্প সংস্কৃতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-
নোয়াখালী শিশু একাডেমি, নোয়াখালী মৌমাছি
কচিকাঁচার মেলা, নোয়াখালী জেলা উদীচী শিল্পি
গোণ্ঠী, নোয়াখালী জেলা উদীচী কর্তৃক
পরিচালিত আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়, ললিতকলা সংগীত বিদ্যালয়, মোহাম্মদ হাসেম সংগীত বিদ্যালয়। এছাড়াও প্রত্যেক উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
নোয়াখালী থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র
নানান সীমাবদ্ধতার ভিতরে নোয়াখালী সংবাদ পত্র
গুলো প্রকাশিত হয়। তবে কোনো পত্রিকাই এখন
পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছেনা। পৃষ্ঠপোষকতার
অভাবই এর প্রধান কারণ। তবুও অনেক বাধাবিপত্তি
সত্তেও কিছু পত্রিকা অনিয়মিত হলেও প্রকাশিত হয়ে
আসছে। তার মধ্যে উল্লখযোগ্য, দৈনিক জাতীয়
নিশান, দৈনিক জনতার অধিকার, দৈনিক জাতীয় নূর, পাক্ষিক লোকসংবাদ, দৈনিক নোয়াখালী প্রতিদিন। নোয়াখালী কন্ঠ, নোয়াখালী মেইল, সাপ্তাহিক চলমান নোয়াখালী প্রভৃতি।নোয়াখালী,
No comments:
Post a Comment